নারী চেষ্টা করলে কি না পারে। সম্ভাবনার এই যুগে নারীর পথচলা আরও সুগম হয়েছে। করোনায় যখন অবরুদ্ধ পুরো পৃথিবী। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনসহ সবকিছুই বন্ধ ছিল। তাই এই অবসর সময়কে কাজে লাগাতে দেশের অনেক তরুণ-তরুণী ইতোমধ্যে অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। অফলাইন ব্যবসার মতো এ ব্যবসাতেও সফলতা হাতছানি দিচ্ছে এসব তরুণদেরকে।
কারণ হিসেবে অনলাইনে ব্যবসা করা তরুণরা বলছে, দেশে অনলাইনে ব্যবসা চালু হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে কষ্ট করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের তরুণরাও অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অসংখ্য নারী যুক্ত হয়েছেন অনলাইন ব্যবসায়। সাধারণ ব্যবসার মতো এখানেও সফলতা লাভ করে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তারা।
এমন একজন উদ্যোক্তার সফলতার গল্প বলছি আজ। তিনি একজন সংগ্রামী সফল নারী উদ্যোক্তা, ‘তারার মেলা’-এর স্বত্তাধিকারী ঐশ্বর্য জাহান। সফল নারী উদ্যোক্তা ঐশ্বর্য জানিয়েছেন, এই সফলতার পেছনে রয়েছে শ্রম ও আনন্দ সুখের অনেক কাব্য।
টাঙ্গাইলের গোসাই জোয়াইর এর মেয়ে ঐশ্বর্য। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে করোনার কড়াল গ্রাসে যখন সবই স্তব্ধ, তখন নারী উদ্যোক্তা ভিত্তিক ফেইসবুক গ্রুপ ‘উই’ তে এক পরিচিত আপুর মাধ্যমে যুক্ত হন। শুরুতে প্রায় মাস খানেক গ্রুপে নিয়মিত একটিভ থেকে কর্মপ্রক্রিয়ার ধারণা নিয়ে অক্টোবরে শুরু করেন মায়ের হাতের তৈরী চালতার আচার বিক্রির কাজ। তার মা যেহেতু বিভিন্ন আচার বানাতে পারদর্শী, তাই শুরুতে চালতার আচার বানালেও আচার প্রিয় ক্রেতাদের আগ্রহে পরবর্তীতে আম, আমড়া ও জলপাই এর আচারও বিক্রি শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ প্রশংসাও পেয়েছিলেন অল্প সময়ে। প্রায় ১২ বছর আগে হারানো বাবার স্বপ্নের কথা ভেবে পরে এর সাথে যুক্ত করেন শাড়ি, থ্রিপিস, খাদি পাঞ্জাবি ও শাল। হাফ সিল্কসহ নানা রকম শাড়ি বিক্রি করে মাত্র দুই মাসের মাথায় অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারীতে লাখপতির তালিকায় নাম লেখান তিনি। মাকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ঐশ্বর্যের সংসারে বরাবরের মতো ভাইয়ের অভাবটা তখনই বুঝতে পারেন, যখন একজন মেয়ে হয়ে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তাকে একা একাই পন্য কিনে আনা ও ক্রেতাকে কুরিয়ার করার জন্য কয়েক কিলোমিটার ভাড়ী পার্সেল গুলো নিয়ে যেতে হয়। এনিয়ে আশেপাশের মানুষ নানা কথা বললেও মা ও বড় বোনদের অনুপ্রেরণায় নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এসবকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন দারুন উদ্যমে। এছাড়াও উইসহ নিয়মিত ক্রেতারা তার থেকে পন্য নিয়ে গুনে মানে ও প্যাকেজিংসহ পুরো প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন সময় উইসহ ইনবক্সে পজেটিভ রিভিউ/মন্তব্যের মাধ্যমে তাকে অনুপ্রেরনা দিয়ে চলেছেন। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়–য়া ঐশ্বর্য শুরুতে উই’তে আচার নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তিতে পাইকারি শাড়ি বিক্রয়ের কাজটি শুরু করলে উই থেকে প্রায় প্রতিদিনই শাড়ি অর্ডার পেতে থাকেন। উইসহ অনলাইনে তার নিয়মিত/রিপিট ক্রেতা প্রায় ৫০-৬০ জন। খুশির কথা এই যে, সম্প্রতি তিনি এফ-কমার্সে কাজ করার ১০ মাসের মাথায় পাঁচ লাখ টাকা বিক্রয় সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানান বর্তমানে তার মাসিক সেল প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এর জন্য তিনি উই এর নাসিমা আক্তার নিশা আপু , রাজিব আহমেদ স্যার, উই পরিবারসহ পথচলার সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং ভবিষ্যতেও সবসময় এসকল প্রিয় মানুষগুলোর অনুপ্রেরণা, সাপোর্ট, ভালোবাসা ও দোয়া কামনা করেন।
ঐশ্বর্য জাহানের অনলাইন ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনলাইনেই ব্যবসা করে নিজের আলাদা একটা পরিচয় করতে চাই। আমার বাবা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির ব্যবসায় করতো। যেহেতু আমার শাড়ি বেশি সেল হয় সেজন্যে বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষে শাড়ি তৈরীর কারখানা করতে চাই। যেখানে তৈরী হবে উন্নত মানের বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন নতুন শাড়ি এবং সেই শাড়ি রপ্তানী হবে বিদেশেও। আমার স্বপ্ন যদি কখনও পূরণ হয় নিজের পরিবার এর সবার দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে চাই। আমি যেহেতু গ্রামে থাকি, গ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে অংশগ্রহনসহ গ্রামের গরীব- দুঃখি, অবহেলিত, লাঞ্ছিত মানুষের পাশে দাড়াতে চাই। এবং সেই সাথে অবহেলিত মায়েদের জন্যে একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলতে চাই।
------------------
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
No comments:
Post a Comment