রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর যেন তাঁকে রাষ্ট্রীয়
মর্যাদা দেওয়া না হয়। তিনি লিখেছেন, যেখানে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
যাচাই-বাছাইয়ের নামে তালিকায় নাম ঢুকিয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে
নিচ্ছেন, সেখানে তিনি মৃত্যুর পর এই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিতে পারেন না। একজন
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর বিবেকের তাড়না আছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা যেখানে
বীর উপাধি পেয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তিনি এই উপাধি ধারণ করতে পারেন না।
প্রকৃতপক্ষে সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা দুই
বছর বাড়িয়ে দিয়েছিল, তখনই ভুয়া সনদ নেওয়ার হিড়িক পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ধরাও পড়েছেন। ছয়জন সচিবও মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ নিয়ে
চাকরির বয়স বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। পরে তদন্তে তাঁদেরসহ আরও অনেকের অপকীর্তি ধরা
পড়ে। এখনো প্রশাসনে এ রকম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কর্মরত আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা
মনে করেন।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে গত ৪৬ বছরে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের
একটি সঠিক তালিকা করতে পারিনি। যখন যে সরকার আসে, তারাই নতুন তালিকা তৈরির
উদ্যোগ নেয়। এ পর্যন্ত ছয়বার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আবার নতুন তালিকার
জন্য যাচাই-বাছাই চলছে। মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের মতো অনেকের আশঙ্কা, এই
যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগে আরও অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হবেন এবং
রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয়
সুযোগ-সুবিধা নেবেন, তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে
যদি কেউ নকল বীরের মর্যাদা ও তকমা নিতে চান, সেটা দেশ ও জাতির জন্য
লজ্জাজনক।
এর পাশাপাশি চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স কমানোর তৎপরতা।
সরকার ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর নির্ধারণ করলেও সম্প্রতি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী
সেটি আরও ছয় মাস কমানোর আবদার করেছেন। এ রকম অযৌক্তিক আবদার গ্রহণের কোনো
সুযোগ আছে বলে মনে করি না।
অতএব সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, তারা যাতে অন্তত
মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের কথাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
নিশ্চিত করতে হবে, তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের নামে একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও যেন
তালিকাভুক্ত হতে না পারেন।
No comments:
Post a Comment