ফুলে ফলে ভরা আমাদের বাংলাদেশ। আকাশে বাতাসে সাত রঙের মেলা। গাছে গাছে নানা রঙের নানা স্বাদের ফুল ও ফলের হাতছানি। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামল এই বাংলাদেশকে আমরা অনেক ভালবাসি। গাছের শাখায় প্রজাপতির ওড়াউড়ি, নাচানাচি। ফুলের সৌরভ আর পাকা ফলের মৌ মৌ গন্ধে খোকা-খুকিদের লাফালাফি, নাচানাচি। পাকা আম কাঁঠাল আর লিচুর টসটসে রসে ভরা ফল দেখে মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। মধু ফলে এখন ভরপুর গ্রাম ও শহরের হাট বাজার। তরমুজ ও ভাঙ্গি এসময়ের একটি লোভনীয় ফল। ফলের দোকানিরা বাহারি রকমের ফলের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে অনেক মজা। সবার দৃষ্টি তাই মামার বাড়ির দিকে।
‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের মধুর রসে
রঙিন করি মুখ।’
জানা-অজানা হাজারো ফুলের গাছ। সুরোভিত ফুলের ঘ্রাণ। গাছের শাখায় পাকা-পাখালির কিচির- মিচির ডাকাডাকি। ডানা মেলে আকাশে উড়ে চলা। এ দেশের মাটি খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এ মাটিতে জন্মেছে নানারকমের ফুল ও ফলের গাছ। আর তাই তো ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না। টসটসে রসে ভরা পাকা আম কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে মন ভরে যায়। নেচে ওঠে মন-প্রাণ। মামার বাড়ির বাগানে পাকা ফলের বিশাল সমারোহ। বাগানের পাকা ফলের মধুর হাসি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
মামার বাড়ি সবাই যেতে চায়। মামার বাড়ি যাওয়া, মামির হাতে দুধ ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা। রাতে নানির বুকে মাথা রেখে ঘুমানো। রাজা-রানী, ভূত পেতœী, রাখাল রাজা, লাল পরী, নীল পরীর গল্প শোনা ইত্যাদি। নানার হাত ধরে গ্রামের হাটে যাওয়া। দই মিষ্টি, ঝল মুড়ি, আইচক্রিম ও মুড়ালি খাওয়া। বিকেল হলে মামার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। ছিপ দিয়ে মাছ ধরা, স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করা, আরো কত কি!
মামার বাড়ির কথা মনে হলেই মন আনন্দে নেচে ওঠে। ছোট বেলায় মামার বাড়ি যেতে চাইতাম। মা বলতেন, বাবা এখন নয়, পরে যাবো। পরে কবে? মা বলতেন, বাবা আমরা মধুমাসে মামার বাড়ি যাবো। মা, মধুমাসে কেন? চল না আমরা এখনই মামার বাড়ি যাই। মা মধুমাস কী। মধুবেটা তাড়াতাড়ি আসে না কেন? বাবা সময় হলেই মধুমাস আসবে। এতটা ব্যস্ত হলে চলবে না। বাবা তুমি পড়। একটু হেসে মা বলতেন, বাবা আর কটা দিন সবুর কর। আমরা মামার বাড়ি অবশ্যই যাবো। সবেমাত্র আমের গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন গেলে তো আমও খেতে পারবে না কাঁঠালও খেতে পারবে না। তখন ছোট ছিলাম তাই মধুমাস কী বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি। মধুমাস হল পাকা ফলের সমারোহে ভরপুর একটি মাস। নাইওরি মেয়েরা মধুমাসে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পাকা ফলের মধুর রসে মুখ রঙিন করতে মেয়ের জামাইকে শ্বশুড় বাড়ি দাওয়াত দেয়া হয়। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন মামার বাড়ি যাওয়ার দাওয়াত জানিয়েছেন এভাবে-
‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই,
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।